Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2013

কান্ডারী হুশিয়ার!

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার! দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ? কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান! যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান। ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান, ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার। অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন। হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ, পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ! কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ? করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার! কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর, বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর! ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর! উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার। ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল য

একটি পতাকা পেলে

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’। কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে। কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে, বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে। কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে, সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে। -হেলাল হাফিজ

মানুষ

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় । আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি, গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না, অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না । কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি, সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে । আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো, বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো, রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো, পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো । আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ? মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে, নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে, নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে । মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো , বাবা থাকতো, বোন থাকতো, ভালোবাসার লোক থাকতো, হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো । আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত বেঁচে থাকাটা আর হতো না । মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়; অথচ আমি সা

নিরানন্দ্রনাথের কবিতা

অমলকান্তি আমার বন্ধু, ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম। রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না, শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে, দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের। আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি। সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর, জাম আর জামরুলের পাতায় যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে। আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে। মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে; চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।” আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে, অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত, যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল, উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না। অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া। অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!