অর্থনীতিবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের অন্তত সাড়ে তিনগুণ সুফল পাবে বাংলাদেশ। সাড়ে সাত লাখ নতুন কর্মসংস্থান হবে যখন সেতুর ওপারে প্রক্রিয়াধীন ১৭ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে । সেতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া দারিদ্র্যপীড়িত ১৩ জেলায় সৃষ্টি হবে নবজাগরণ। সেতুটি পরিবহন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে সেমিনারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী নেতারাও।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সরকারের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে পদ্মা সেতু একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের কাজ করবে। এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের শেষ ভৌগলিক বিভাজন শেষ হতে যাচ্ছে। এই সেতুর মাধ্যমে সংযোগের আওতায় আসতে যাওয়া ২১ জেলার মধ্যে ১৩টিতে দারিদ্র্যের হার বাংলাদেশের গড় দারিদ্র্য হারের চাইতে বেশি। এই জেলাগুলো দেশের মূলধারায় আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির দরজা খুলবে। পদ্মা সেতু চালু হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ১.২৩% বাড়বে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলো জিডিপিতে আরও দুই শতাংশের বেশি যোগ করবে। ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপির আড়াই শতাংশ হিসাবে সেতুটি থেকে আসবে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এ হিসাবে নির্মাণ ব্যয়ের অন্তত সাড়ে তিনগুণ বেশি সুফল আসবে। সেতুর পূর্ণাঙ্গ সুফল কাজে লাগাতে গেলে ইনভেস্টমেন্ট কানেকটিভিটি নিশ্চিত করতে হবে। ২১ জেলায় প্রস্তাবিত ১৭টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে সাড়ে সাত লাখ কর্মসংস্থান হবে।
সরকার সেতু ও সড়ক নির্মাণ করে উন্নয়নের মেরুদন্ড তৈরি করে দিয়েছে। এখন চারপাশে বেসরকারি খাতে এলোমেলো উদ্যোগ নিলে এই উন্নয়ন টেকসই হবে না। এই কারণে রাস্তার দুই পাশে পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, "পদ্মা সেতু করার সাহসী পদক্ষেপ আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এটা শেষ না হতেই আমরা এখন আরেকটি পদ্মা সেতুর দাবি করছি। সবাই এখন আমাদের প্রশংসা করছে।" তিনি আরও বলেন, "পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও শেখ হাসিনাকে 'মোস্ট পপুলার লিডার' হিসেবে গণ্য করা হয়।"
বিশ্বব্যাংক সরে গেলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালেও সরকার এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছে বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। প্রকল্পে বিদেশি মুদ্রার যোগানে অগ্রণী ব্যাংকের ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেন।তিনি বলেন, "শুরু থেকে এ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক প্রকল্পে বিদেশি মুদ্রা হিসেবে ১.৬ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে। এরপরেও আমদানি বাণিজ্য, রপ্তানি বাণিজ্যে কোন সমস্যায় পড়েনি ব্যাংকটি।"
পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে দেশীয় উদ্যোক্তারা ২.২৮ লাখ টন সিমেন্ট সরবরাহ করেছেন। আর অন্যান্য কাজ মিলে সেতু প্রকল্পে মোট ব্যবহার হয়েছে ৫.৬২ লাখ টন দেশী সিমেন্ট। অস্ট্রেলিয়ার স্টিল ব্যবহার করে কাজ শুরু হওয়া পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হচ্ছে দেশীয় স্টিল ব্যবহারের মাধ্যমে। এ প্রকল্পে এ পর্যন্ত দেশীয় ২.১৫ লাখ টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯২ হাজার টন ব্যবহার করা হয়েছে মূল স্ট্রাকচারে।
Comments
Post a Comment