বিশ্বের সবচেয়ে বিনিয়োগের উপযোগী জায়গা বাংলাদেশ। এদেশে বিনিয়োগ করলে সফল হবে। এটা বুঝেই বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, সরকারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বিজনেস সামিটে এসেছেন। এর মাধ্যমে সামিট সফল হয়েছে। এসব উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত রয়েছে। এগুলোর কর্মযজ্ঞ চালু হলে ২০৪১ নয়, তার আগেই আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাব।
১৩ মার্চ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন এসব কথা জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গ্যাস বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকট ও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ৪৭০ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। এখন সরকার ব্যবসা বান্ধব। পদ্মা সেতু চালু করেছে। বিভিন্ন বড় বড় অবকাঠামোর কাজ চলছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এই কর্মযজ্ঞ বলে দেয় ২০৪১ সালে এক ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে নয়, সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ নেতা বলেন, বাংলাদেশ এখন ৯ম তম ভোক্তার বাজার। এখানে ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। যার ৬৮ শতাংশ জনশক্তি কর্মক্ষম। এখানে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কারণ আমরা ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি। এখানে ভোক্তা বাজার আছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ গুরুত্বপূর্ণ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত-ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এটি বুঝেই দক্ষিণ করিয়া-জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা বুঝেছে এখানে বিনিয়োগ করলে সফল হবেই।
বিজনেস সামিট প্রসঙ্গে এফবিসিসি সভাপতি বলেন, এই প্রথম বাংলাদেশ বিজনেস সামিট করেছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু ভুল ত্রুটি হলেও সফলতাই বেশি। সফল হওয়ার অন্যতম কারণ ৮৯৬ জন সামিটে অংশ নিতে রেজিস্ট্রশন করেছে। ৩০০র বেশি বিদেশি এসেছে। সামিটে প্রতিটি সেশন ছিল প্রাণবন্ত। বেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা আগ্রহ নিয়ে সেশনগুলোতে অংশ নিয়েছেন। এরইমধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে চারটি ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। সৌদি আরো বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। আরো কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই সামিটের উদ্দেশ্য ছিল ব্র্যান্ডিং করা ও দেশের সক্ষমতা তুলে ধরা, এতে আমরা সফল হয়েছি।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংগঠন। ট্রেড অর্গানাইজেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ (১৯৯৪ সালে সংশোধিত) এবং কোম্পানি আইন ১৯১৩ (১৯৯৪ সালে সংশোধিত)-এর অধীনে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। ফেডারেশনের তিন ধরণের সদস্য রয়েছে "চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এ ও বি শ্রেণীর চেম্বার), শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহ (এ ও বি শ্রেণির সমিতি) এবং যৌথ চেম্বার (বিদেশি কোম্পানিসমূহের সাথে গঠিত)। বর্তমানে এফবিসিসিআই-এর সদস্য সংখ্যা ৩৬৯। এর মধ্যে ৭০ জন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এ শ্রেণীর ৩৮ বি শ্রেণীর ৩২), ২৮৩ জন শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহের (এ শ্রেণীর ২৭৭ বি শ্রেণীর ৬) এবং অবশিষ্ট ১৬ জন বিদেশি যৌথ চেম্বারের প্রতিনিধি। চেম্বার এবং সমিতিসমূহের সদস্যদের সরাসরি ভোটে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদ ২ বৎসরের জন্য নির্বাচিত হয়। এই কমিটি/পর্ষদ এফবিসিসিআই-এর সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। দুই প্রক্রিয়ায় এফবিসিসিআই-এর নির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন হয়। কমিটির ৪৪ জন সদস্যের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং ২০ জন সদস্য নির্বাচিত হয় চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্যগণের ভোটে। অপর ২১ জন সদস্য নির্বাচিত হয় শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহের সদস্যদের ভোটে। এফবিসিসিআইয়ের ৪৪ টি স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে যেগুলি বিনিয়োগ ও শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদকে পরামর্শ ও তথ্য প্রদান করে।
এদিন ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ শীর্ষক অধিবেশনে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোরিয়া একটি সফল দেশের উদাহরণ। এর মাধ্যমে সহজে অর্থায়ন পাওয়া যায়। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ফলপ্রসু। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাংলাদেশে খুব তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ শীর্ষক অধিবেশনে ডান অ্যান্ড ব্রাডস্ট্রিট এসএএমই এর প্রধান নির্বাহী রাজেশ মির চান্দানি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিদেশি বিনিয়োগের ভালো স্থান হতে পারে।
‘ফার্মাসিটিউক্যালস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার’ শীর্ষক অধিবেশনে মেডট্রনিক বাংলাদেশ এর কান্ট্রি প্রধান দেবজ্যোতি ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশে ওষুধ তৈরির ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। বড় একটি বাজার হতে পারে। এ খাতে যদি বিনিয়োগ করা যায় তাহলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
‘সার্কুলার ইকোনোমি’ শীর্ষক অধিবেশনে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিদেশি উদ্যোক্তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় যদি এখানে সুযোগ-সুবিধা বেশি হয় তাহলে বিনিয়োগ করবে। তা না হলে অন্য দেশে চলে যাবে। এদিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এ অধিবেশনে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইইউ শুধু বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজারই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজার। বিশ্ব চক্রাকার অর্থনীতি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বাংলাদেশকেও এ বিষয়ে আরও অগ্রগতির জন্য তাগিদ দেন তিনি।
Comments
Post a Comment